সম্প্রতি বনপাড়ার একটি হাসপাতালে একটি শিশুর জন্ম ঘিরে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, শিশুটির শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত হাত ও পা রয়েছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই বিরল রোগটির নাম Polymelia (পলিমেলিয়া)। এটি একটি জন্মগত ত্রুটি,
যার সম্পর্কে অনেকেরই বিস্তারিত ধারণা নেই।
পলিমেলিয়া (Polymelia) কী?
Polymelia হলো একটি বিরল জন্মগত ত্রুটি, যেখানে নবজাতকের শরীরে স্বাভাবিক সংখ্যার চেয়ে বেশি হাত বা পা থাকে। এই অঙ্গগুলো সাধারণত
বিকৃত ও কার্যক্ষম হয় না। শরীরের বিভিন্ন স্থানে যুক্ত থাকতে পারে। এটি একটি শারীরিক বিকাশের সময়কার জটিলতার ফল।
Polymelia রোগের কারন :
Polymelia এর পেছনে প্রধানত দুইটি কারণ চিহ্নিত করা যায়:
১. Parasitic Twin (পরজীবী যমজ): গর্ভাবস্থায় যমজ শিশুর একটি ভ্রূণ পূর্ণভাবে গঠিত না হয়ে আরেকটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।
২. জেনেটিক মিউটেশন বা কোষ বিভাজনের ত্রুটি: ভ্রূণের কোষ বিভাজনের সময় কোন ত্রুটি হলে অতিরিক্ত অঙ্গ গঠিত হতে পারে।
অন্যান্য কারণ:
• পরিবেশগত বিষক্রিয়া
• গর্ভকালীন পুষ্টিহীনতা
• রেডিয়েশনের প্রভাব
পলিমেলিয়া (Polymelia) রোগ এর লক্ষণ :
• অতিরিক্ত হাত বা পা যা শরীরের পাশে, পিঠে বা তলপেটে থাকতে পারে
• অঙ্গগুলো সাধারণত অকার্যকর থাকে
• শিশুর স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হতে পারে
এমনকি অন্যান্য জন্মগত ত্রুটির কারণের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
পলিমেলিয়া (Polymelia) রোগের চিকিৎসা :
আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এই রোগের সমাধান সম্ভব। তবে চিকিৎসা নির্ভর করে শিশুর অবস্থা, অঙ্গের অবস্থান ও জটিলতার উপর।
• বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন: শিশু বিশেষজ্ঞ, অস্থি বিশেষজ্ঞ ও নিউরোসার্জনের পরামর্শ
• ইমেজিং টেস্ট: MRI, CT Scan, X-ray
• সার্জারি: অতিরিক্ত অঙ্গ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা
• পরবর্তী থেরাপি: ফিজিওথেরাপি ও নিয়মিত চেকআপ
Polymelia ভয়াবহ হলেও প্রতিকারযোগ্য একটি শারীরিক অবস্থা। অনেক সময় দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে শিশুটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।
সমাজের করণীয় ও দৃষ্টিভঙ্গি :
এমন শিশুদের আমরা যেন কখনোই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করি। এটি একটি মেডিক্যাল কন্ডিশন, কোনো অলৌকিকতা বা অভিশাপ নয়।
এই শিশুদের প্রতি সহানুভূতি, মানবিকতা ও ভালোবাসাই হতে পারে তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সহায়।
উপসংহার :
Polymelia একটি বিরল এবং চ্যালেঞ্জিং জন্মগত অবস্থা হলেও, সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করলে এর সফল সমাধান সম্ভব। আমাদের উচিত
এই শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা এবং পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। এই বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব।