হার্লেকুইন ইকথায়োসিস ত্বকের ভয়াবহ এক রোগের নাম

প্রথমবারের মতো মা হয়েছেন সাবিহা। মেয়ের মুখ দেখার অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে আছেন তিনি ও তাঁর স্বামী। কিন্তু সেই স্বপ্নভঙ্গ হলো এক কঠিন বাস্তবতায় ডাক্তার জানালেন, নবজাতককে এখনই ছোঁয়া যাবে না। কারণ শিশুটি জন্মেছে এক বিরল এবং জটিল ত্বকের রোগ নিয়ে, যার নাম হার্লেকুইন ইকথায়োসিস (Harlequin Ichthyosis)।

এটি একটি অত্যন্ত বিরল ও জটিল জন্মগত ত্বকের রোগ।

হার্লেকুইন ইকথিওসিস রোগটি বলতে কি বোঝায় ?

হার্লেকুইন ইকথায়োসিস হলো একটি জেনেটিক ত্বকের রোগ, যেখানে শিশুর ত্বক জন্ম থেকেই অস্বাভাবিকভাবে মোটা, শক্ত এবং ফাটলযুক্ত হয়। এই রোগে আক্রান্ত শিশুর ত্বক দেখতে একেবারে পাথরের মতো হয়, যা শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি করে।

এই রোগটি হয় ABCA12 নামে একটি জিনে ত্রুটি থাকলে। বাবা-মা উভয়েই যদি এই জিনের বাহক হন, তবে সন্তানের শরীরে এই রোগ দেখা দিতে পারে। এটিকে অটোসোমাল রিসেসিভ ডিসঅর্ডার বলা হয়।

হার্লেকুইন ইকথিওসিস-এর লক্ষণসমূহ :

• ত্বক হয় মোটা, শক্ত ও স্কেলের মতো ফাটলযুক্ত
• শিশুর মুখের গঠন বিকৃত থাকে চোখ, নাক ও ঠোঁট অস্বাভাবিক হয়
• চোখের পাতা উল্টো হয়ে থাকতে পারে (Ectropion)
• আঙুলগুলো বাঁকা বা বিকৃত হতে পারে
• শিশুর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়
• খাওয়া-দাওয়া ও শ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতা দেখা দেয়
• অনেক সময় কান ও চোখ আংশিক ঢাকা পড়ে যায়

হার্লেকুইন ইকথিওসিস-এর ঝুঁকিসমুহ :

এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। প্রধান ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
• ইনফেকশন: ত্বকে ফাটলের কারণে ব্যাকটেরিয়া সহজেই ঢুকে সংক্রমণ ঘটাতে পারে
• ডিহাইড্রেশন: ত্বক পানি ধরে রাখতে না পারায় শরীর দ্রুত পানি হারায়
• তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা: শিশুর শরীর অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে
• শ্বাসপ্রশ্বাসের জটিলতা: মুখ ও নাকের গঠন বিকৃত থাকায় শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়
• খাদ্য গ্রহণে সমস্যা: মুখের সমস্যা থাকায় খাওয়াতে কষ্ট হয় ঠোঁট ও মুখের সমস্যা থাকায় খাওয়াতে কষ্ট হয়

হার্লেকুইন ইকথিওসিস রোগটি নির্নয় পদ্ধতি :

• শিশুর শারীরিক পরীক্ষা, যা ত্বকের উপস্থিতির উপর নির্ভর করে নিশ্চিত হওয়া যায়
• জেনেটিক টেস্টিংয়ের মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ জিন শনাক্ত করার মাধ্যমে
• গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়

হার্লেকুইন ইকথিওসিস-এর চিকিৎসা পদ্ধতি :

এখন সময় বদলেছে। উন্নত চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে অনেক হার্লেকুইন শিশুই সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে। যেমন :


• নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (NICU): জন্মের পর শিশুকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি
• ত্বকের যত্ন: ভ্যাসলিন, অলিভ অয়েল, বা চিকিৎসকের নির্ধারিত ক্রিম দিয়ে বারবার ত্বক ময়েশ্চারাইজ করা
• পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশে রাখা
• শরীর ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা রাখা
• পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার (পরবর্তী সময়ে)
• নিয়মিত চর্মরোগ ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের ফলোআপ

হার্লেকুইন ইকথিওসিস রোগটি প্রতিরোধে করণীয় :

• বিবাহপূর্ব বা গর্ভাবস্থায় জেনেটিক কাউন্সেলিং করুন
• পরিবারে ত্বকজনিত রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
• পরিকল্পিত গর্ভধারণ করুন ও নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকুন
• গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও ফোলিক অ্যাসিড সঠিকভাবে গ্রহণ করুন

শেষ কথা:

হার্লেকুইন ইকথায়োসিস একটি ভয়াবহ শারীরিক চ্যালেঞ্জ হলেও, এটা চিকিৎসাযোগ্য এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। একজন মায়ের সময়মতো সচেতনতা ও ভালোবাসাময় যত্ন একটি শিশুর জীবন বদলে দিতে পারে।

আপনার একটি পোস্ট, একটি শেয়ার বা একটি সচেতন বার্তাই হয়তো কারও জীবনে আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।

তাই সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন। আপনার সচেতনতা পারে একটি শিশুর জীবন বাঁচাতে, ধন্যবাদ।