স্পাইনা বিফিডা একটি বিরল রোগ

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি শিশুর পিঠে অস্বাভাবিক একটি গর্ত বা ফোলা অংশ। প্রথম দেখায় অনেকেই বিস্মিত হবেন শিশুটির এমন কী সমস্যা হলো?

আসলে এটি একটি জন্মগত রোগ স্পাইনা বিফিডা (Spina Bifida), বাংলায় যাকে বলা হয় “খোলা ত্রুটি”। এটি বিরল হলেও গুরুতর, এবং দ্রুত চিকিৎসা ও সঠিক যত্নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

স্পাইনা বিফিডা কী?

স্পাইনা বিফিডা একটি নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (Neural Tube Defect), যা গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের গঠনকালীন সময়ে ঘটে। এই অবস্থায় মেরুদণ্ডের হাড় পুরোপুরি বন্ধ হয় না, ফলে স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কিছু অংশ শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে।

স্পাইনা বিফিডার সম্ভাব্য কারণসমূহ:

বংশগত প্রভাব: পরিবারের কারও মধ্যে পূর্বে এ রোগ থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।

ফোলিক অ্যাসিডের ঘাটতি: গর্ভাবস্থায় ফোলিক অ্যাসিডের অভাব নিউরাল টিউব ডিফেক্টের প্রধান কারণ।

পরিবেশগত ও জীবনধারাগত কারণ: ধূমপান, মদ্যপান, সংক্রমণ, বা অপুষ্টি।

মায়ের বয়স ও স্বাস্থ্য: ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে গর্ভধারণ, অথবা ডায়াবেটিস, লুপাস ইত্যাদি রোগ থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।

অতিরিক্ত তাপমাত্রা: গর্ভাবস্থায় স্নান বা জ্বরের কারণে শরীরের অতিরিক্ত উত্তাপও হতে পারে একটি কারণ।

লক্ষণসমূহ:

  • পিঠে গর্ত বা ফোলা অংশ
  • পায়ের দুর্বলতা বা অক্ষমতা
  • প্রস্রাব-মলত্যাগে সমস্যা
  • মানসিক বিকাশে বিলম্ব
  • ব্যথা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা

চিকিৎসা পদ্ধতি :

স্পাইনা বিফিডা চিকিৎসাযোগ্য, তবে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

১. অস্ত্রোপচার: জন্মের পর অথবা কখনো কখনো গর্ভাবস্থাতেও শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে মেরুদণ্ডের খোলা অংশ ঠিক করা হয়।

২. ফিজিক্যাল ও স্পিচ থেরাপি: পেশী শক্তিশালী করতে ও স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করতে সহায়ক।

৩. সহায়ক যন্ত্রপাতি ও সাপোর্ট: হাঁটাচলা ও দৈনন্দিন কার্যকলাপের জন্য হুইলচেয়ার বা ওয়াকারের ব্যবহার।

৪. পরিবারিক সাপোর্ট ও কাউন্সেলিং: শিশুটির মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য পরিবার ও সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিরোধে কী করণীয়?

গর্ভধারণের আগে ও গর্ভাবস্থায় ফোলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা

  • সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
  • ধূমপান-মদ্যপান বর্জন
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
  • গর্ভাবস্থায় জ্বর বা সংক্রমণের দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া

আমাদের দায়িত্ব,

স্পাইনা বিফিডা আক্রান্ত শিশুরা বিশেষ যত্ন ও সহানুভূতির দাবিদার। আমরা সবাই মিলে

• রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি

• কুসংস্কার দূরীকরণ

• পরিবারকে মানসিক সাপোর্ট প্রদান

• শিশুটিকে সমাজের একজন পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় ভূমিকা রাখতে পারি।

উপসংহার

স্পাইনা বিফিডা একটি গুরুতর সমস্যা হলেও সময়মতো চিকিৎসা ও সঠিক সাপোর্টের মাধ্যমে শিশুটিকে একটি সুন্দর জীবন দেওয়া সম্ভব। আপনার একটু সচেতনতাই একজন শিশুর জীবনে পরিবর্তন এনে দিতে পারে।
আসুন, আমরা সবাই সচেতন হই এবং সুস্থ থাকি,

কারন, আপনাদের সুস্থতাই আমাদের কাম্য, ধন্যবাদ।