ফেটাস ইন ফেটু একটি বিরল রোগ

একটি শিশুর মস্তিষ্কে আরেকটি শিশু! (ফেটাস ইন ফেটু)
শুনতে মনে হতে পারে কোনো কল্পকাহিনি বা সায়েন্স ফিকশন। তাই না?
কিন্তু চীনে ঘটেছে এমনই এক বাস্তব ও বিস্ময়কর ঘটনা, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি বিরল ঘটনা।

কী ঘটেছিল শিশুটির সঙ্গে?

মাত্র ১ বছর বয়সী এক শিশুর মাথা হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে শুরু করে। সঙ্গে দেখা দিতে থাকে মানসিক বিকাশে বিলম্ব, দৃষ্টির সমস্যা এবং দুর্বল প্রতিক্রিয়া।
চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তার মস্তিষ্কে খুঁজে পান একটি অদ্ভুত গঠন। সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে তার মস্তিষ্কের ভেতরে বাস করছে একটি পরিপূর্ণ ভ্রূণ! এই ভ্রুনটি মূলত শিশুটির যমজ ভাই বা বোন ছিলো। যার ছিলো হাত-পা, হাড় এবং এমনকি নখ।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই বিরল অবস্থাকে বলা হয় ফেটাস ইন ফেটু (Fetus-in-Fetu).

ফেটাস ইন ফেটু কী?

এটি এক ধরনের জন্মগত বিকৃতি, যেখানে গর্ভকালীন সময়েই যমজ ভ্রূণের একটি আরেকটিকে শোষণ করে ফেলে। শোষিত ভ্রূণটি তখন অপর ভ্রূণের শরীরেই থেকে যায়, এক ধরনের পরজীবী হিসেবে।
সাধারণত এটি পেট বা বুকের মধ্যে অবস্থান করে, কিন্তু মস্তিষ্কে থাকা অত্যন্ত বিরল—প্রায় মিলিয়নে একজনের ক্ষেত্রে ঘটে।

কেন হয় এমন?

যখন গর্ভে একটি যমজ ভ্রূণ ঠিকভাবে বিভাজিত না হয়ে, একটি আরেকটির ভেতরে চলে যায়, তখন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
মস্তিষ্কে থাকা এই ভ্রূণ চাপ সৃষ্টি করে শিশুর বিকাশে বাধা দেয়।
এছাড়া জেনেটিক মিউটেশন বা ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিক পরিবর্তনও এর পেছনে কারণ হতে পারে।

কোন লক্ষণগুলো দেখে সতর্ক হবেন?

এই সমস্যার নির্দিষ্ট উপসর্গ নেই, তবে কিছু লক্ষণ দেখা গেলে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে,

  • শিশুর মাথা অস্বাভাবিকভাবে বড় হওয়া
  • মানসিক বা শারীরিক বিকাশে বিলম্ব
  • দৃষ্টির সমস্যা বা ভারসাম্যহীনতা
  • ঘন ঘন খিঁচুনি
  • অস্বাভাবিক ঘুম বা সাড়া কম দেওয়া

এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে দেরি না করে নিউরোলজিস্টের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সিটি স্ক্যান করানো উচিত।

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুটির মুক্তি

চিকিৎসকেরা সফলভাবে শিশুটির মস্তিষ্ক থেকে ভ্রূণটি অপসারণ করেন। অপসারিত ভ্রূণের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১০ সেন্টিমিটার এবং ছিল একটি পরিপূর্ণ মানবাকৃতি।

তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শিশুটির পরবর্তী মানসিক ও শারীরিক উন্নতি নির্ভর করবে থেরাপি ও সময়ের উপর।

অতীতেও ঘটেছে এমন ঘটনা

১৯৮২ সালে, মাত্র ৬ সপ্তাহ বয়সী একটি শিশুর মস্তিষ্ক থেকে অপসারণ করা হয়েছিল একটি ১৪ সেন্টিমিটার লম্বা ভ্রূণ।

উপসংহার:

জীবনের গভীরে লুকিয়ে থাকে এমন সব বিস্ময়, যা বিজ্ঞান দিয়েও পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না।

একটি ছোট উপসর্গের পেছনে থাকতে পারে এক অবিশ্বাস্য সত্য।
তাই শিশুর বিকাশে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে তা অবহেলা না করে, দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
তাই সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।