পোস্টপার্টাম সাইকোসিস

পোস্টপার্টাম সাইকোসিস – একটি ভয়ংকর মানসিক রোগ

পোস্টপার্টাম সাইকোসিস – একটি ভয়ংকর মানসিক রোগ

মাত্র ৮ দিন আগে মা হয়েছেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই আচরণ পাল্টে গেল। তিনি বলছেন এবং লিখছেন, “বাচ্চাকে মেরে রক্ত খাব।

ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো পরিবারে। কেউ বুঝতে পারছে না, কী ঘটছে এই নারীর সঙ্গে। পরপর দুই দিন তাকে নেওয়া হয় ফকির,

কবিরাজ ও তাবিজ-ধারীদের কাছে। উপায় না দেখে শেষমেশ হাসপাতালে আনা হয় তাকে। চিকিৎসকরা জানান, এই মা এক মারাত্মক

মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন যার নাম Postpartum Psychosis (পোস্টপার্টাম সাইকোসিস)।

পোস্টপার্টাম সাইকোসিস কী ?

পোস্টপার্টাম সাইকোসিস হলো সন্তান জন্মের পর মায়ের মানসিক ভারসাম্য হারানো এক জটিল অবস্থা। এটি সাধারণত বাচ্চা জন্মের ১ থেকে

২ সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হয়। প্রতি ১,০০০ জন মায়ের মধ্যে মাত্র ১ বা ২ জন এতে আক্রান্ত হন, তবে এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি হিসেবে ধরা উচিত।

পোস্টপার্টাম সাইকোসিস এর লক্ষণসমূহ :

• ঘুমে ব্যাঘাত

• বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা

• অতিরিক্ত উত্তেজনা বা বিষণ্ণতা

• বাস্তব বা অবাস্তব চিন্তা (ডেলিউশন)

• শিশুর বা নিজের ক্ষতি করার ভাবনা (অত্যন্ত জরুরি সতর্কবার্তা)

• কল্পনা করা বা কিছু শুনতে/দেখতে পাওয়া যেটা বাস্তবে নেই (হ্যালুসিনেশন)

পোস্টপার্টাম সাইকোসিস হওয়ার কারণসমূহ :

এর সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু সম্ভাব্য কারণ রয়েছে:

• হরমোনের হঠাৎ পরিবর্তন

• অতিরিক্ত চাপ ও ঘুমের অভাব

• পারিবারিক মানসিক রোগের ইতিহাস

• পূর্বে বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা সাইকোসিসের ইতিহাস

পোস্টপার্টাম সাইকোসিস এর চিকিৎসা পদ্ধতি :

পোস্টপার্টাম সাইকোসিসের চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা জরুরি। এতে সাধারণত নিচের পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়:

• মানসিক কাউন্সেলিং ও পরিবারিক সহায়তা

• মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে মনোযোগ সহকারে চিকিৎসা দেওয়া

• মানসিক অবস্থা অনুযায়ী ওষুধ (অ্যান্টিসাইকোটিক, মুড স্ট্যাবিলাইজার ইত্যাদি)

ভালো খবর হলো, সময়মতো চিকিৎসা পেলে বেশিরভাগ মা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

পোস্টপার্টাম সাইকোসিস-এ আক্রান্ত মায়ের প্রতি করনীয় :

মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। শুধু শারীরিক নয়, সন্তান জন্মের পর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

যদি আপনি বা আপনার কাছের কেউ সন্তান জন্মের পর নিচের যেকোনো লক্ষণ লক্ষ্য করেন, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:

• হঠাৎ অতিরিক্ত কান্না বা হতাশা

• অদ্ভুত কথা বলা বা আচরণ

• ঘুম না হওয়া বা অতিরিক্ত সন্দেহ

স্মরণে রাখুন :

একজন সুস্থ মা মানেই একটি নিরাপদ শিশু এবং একটি শান্ত পরিবার। মায়ের মন ভাল থাকলে সন্তানও ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।

শেষ কথা :

আমরা যতটা যত্ন নিই একটি নবজাতকের, ঠিক ততটাই যত্ন দরকার একজন নবজাতক মায়ের মানসিক ও আবেগগত সুস্থতার।


সমাজ ও পরিবার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, মায়েদের পাশে দাঁড়ানো বিশেষ করে তখন, যখন তারা চুপচাপ একা লড়ে যাচ্ছেন।
তাই সচেতন থাকুন এবং নিজের এবং অন্যদের এমন পরিস্থিতিতে পাশে থাকুন।


আপনাদের সুস্থতাই আমাদের কাম্য, ধন্যবাদ।