ইপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভারিক্সফর্মিস Epidermodysplasia Verruciformis (EV) – চিকিৎসকরা জানান, এটি একটি বিরল রোগ।
খুলনার এক তরুণ আবুল বাজানদার। রিকশাভ্যান চালিয়ে সংসার চলত। স্ত্রী আর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ছিল ছোট্ট সুখের জীবন।
কিন্তু হঠাৎ একদিন তার হাত-পায়ে গাছের শিকড়ের মতো খসখসে কিছু উঠতে শুরু করে।
তা দিনে দিনে এত বড় হয় যে, তিনি নিজের মুখেও খাবার তুলতে পারেন না।
আর তাই মানুষ তাঁকে ডাকতে শুরু করে গাছ মানুষ নামে।
স্বপ্ন ছিল মেয়েকে কোলে নেওয়ার, স্ত্রীর পাশে থাকার। রোগ সব কিছু কেড়ে নেয়। তবুও থেমে যাননি।
ঢাকায় ১৬ বার অস্ত্রোপচার হয়। কিছু উন্নতি হলেও আবার রোগ ফিরে আসে।
আজও তিনি লড়ছেন মেয়ের মুখের হাসির জন্য।
Epidermodysplasia Verruciformis (EV) কী?
EV হলো একটি বংশগত চর্মরোগ, যেখানে শরীর HPV (Human Papilloma Virus)-এর সংক্রমণে অস্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়া করে।
ফলে ত্বকে গাছের বাকলের মতো মোটা খসখসে স্তর তৈরি হয়—যা দেখতে গাছের শিকড়ের মতো।
ইপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভারিক্সফর্মিস রোগের লক্ষণ:
- হাত, পা, মুখে গাছের মতো চামড়া ওঠে
- শুরুতে ছোট ছোট দাগ দিয়ে শুরু হয়
- ধীরে ধীরে তা বড় হয়ে যায় এবং ব্যথা তৈরি করে
- অনেক সময় হাত-পা নাড়ানোও বন্ধ হয়ে যায়
ইপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভারিক্সফর্মিস হওয়ার কারণ:
- শরীরে EVER1 বা EVER2 নামে জিনে সমস্যা থাকলে EV হতে পারে
- এই জিনগুলো ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করে
- সমস্যাযুক্ত ব্যক্তির শরীর HPV ভাইরাস ঠেকাতে পারে না, ফলে ত্বকে বিকৃতি দেখা দেয়
ইপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া(EV) এর সামাজিক প্রভাব:
- মানুষ এদের দেখে ভয় পায়, দূরে সরে যায়
- অনেকে কথা বলতেও চায় না
- চাকরি বা কাজের সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে
- পরিবারেও বোঝা মনে করা হয়
- এভাবে অনেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। কেউ কেউ ভিক্ষা করেও দিন কাটাতে বাধ্য হন।
ইপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া এর চিকিৎসা কি?
EV-এর এখনো কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে কিছু পদ্ধতিতে রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব:
- অস্ত্রোপচারে খসখসে অংশ কেটে ফেলা
- ভাইরাস কমানোর ওষুধ (যেমন: রেটিনয়েডস)
- ইমিউন থেরাপি
- নিয়মিত চেকআপ, কারণ EV থেকে ত্বকের ক্যান্সার হতে পারে
ইপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভারিক্সফর্মিস প্রতিরোধে করণীয়:
যেহেতু EV একটি বংশগত রোগ, তাই শতভাগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তবে সচেতনতা ও কিছু পদক্ষেপে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে:
১. জিনগত পরামর্শ (Genetic Counseling):
পরিবারের কারো EV থাকলে বিয়ের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
২. ত্বকে অস্বাভাবিক দাগ দেখা দিলে দ্রুত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।
৩. শিশুদের ত্বকের যত্ন ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ।
৪. ভাইরাস প্রতিরোধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) শক্ত রাখা।
- সুষম খাবার
- বিশ্রাম
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
৫. সামাজিক সচেতনতা:
- EV ছোঁয়াচে নয়—তাই ভয় নয়, সহানুভূতি
- আক্রান্তদের প্রতি মানবিক আচরণ
- সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা
শেষ কথা :
গাছ মানুষেরা গল্পের চরিত্র নয় তারা আমাদের সমাজেরই মানুষ। আমরা যদি সহানুভূতি, ভালোবাসা আর সম্মান দিতে পারি তবে তারাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে। তাই আমাদের উচিত তাদের পাশে দাড়ানো এবং সচেতনা হওয়া। কারন সচেতনতাই পারে আমাদের যেকোনো রোগ থেকে বাঁচাতে।
আপনাদের সুস্থতাই আমাদের কাম্য, ধন্যবাদ।