ম্যাক্রোগ্লসিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য কারণ গুলো কী?

ম্যাক্রোগ্লসিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য কারণ গুলো কী?

কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে

একটি ছোট্ট শিশু, যার মুখের বাইরে ঝুলে আছে অস্বাভাবিক রকম বড় একটি জিহ্বা।

কেউ দেখে আঁতকে উঠছেন, কেউ কৌতূহলী হচ্ছেন, আবার কেউ দুঃখে আফসোস করছেন।

আসলে এই শিশুটি একটি বিরল ও কষ্টদায়ক অবস্থার শিকার। এই রোগটির নাম ম্যাক্রোগ্লসিয়া

(Macroglossia)। এটি শুধুই একটি শারীরিক সমস্যা নয়, বরং এটি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা,

আত্মবিশ্বাস, এবং ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

ম্যাক্রোগ্লসিয়া কী?

ম্যাক্রোগ্লসিয়া হল এমন একটি অবস্থা, যেখানে কারো জিহ্বা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বড় হয়ে

যায়। এতে করে খাওয়া, কথা বলা, নিঃশ্বাস নেওয়া সব কিছুতেই সমস্যা দেখা দেয়। এটি যেকোনো

বয়সেই হতে পারে। জন্ম থেকে শুরু করে পরবর্তীতে শরীরের নানা সমস্যার কারণেই মুলত দেখা দেয় ম্যাক্রোগ্লসিয়া।

ম্যাক্রোগ্লসিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো কী?

১. জন্মগত জটিলতা বা জন্মের সময়কার অসুস্থতা:

কিছু মানুষ জন্ম থেকেই বিশেষ ধরনের শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়, যেমন ডাউন সিনড্রোম বা শরীরের

কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া।

২. রক্তনালী বা শরীরের তরল জমে গাঁট তৈরি হওয়া:

কখনো কখনো রক্ত বা শরীরের লসিকা তরল জমে জিহ্বায় গাঁট তৈরি করে, যা ধীরে ধীরে ফুলে গিয়ে জিহ্বাকে

বড় করে তোলে।

৩. হরমোনের ঘাটতি:

যাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোন কম তৈরি হয়, তাদের মধ্যে জিহ্বা বড় হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।

৪. অনুপযোগী পদার্থ জমে যাওয়া:

শরীরে কিছু অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর প্রোটিন জাতীয় পদার্থ জমে গিয়ে জিহ্বাকে অস্বাভাবিকভাবে

বড় করতে পারে।

৫. জিহ্বার গঠনগত সমস্যা বা জন্মের সময় আঘাত:

জন্মের সময় কোনো ত্রুটি বা দুর্ঘটনা হলে জিহ্বার গঠন পরিবর্তিত হতে পারে, যা পরবর্তীতে এমন

অবস্থার সৃষ্টি করে।

আক্রান্ত হবার পরে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়:

• স্পষ্ট করে কথা বলতে না পারা

• খাবার খাওয়ার সময় সমস্যা হওয়া

• নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া

• রাতে ঘুমের সমস্যা

• নিজেকে সামাজিকভাবে গুটিয়ে নেওয়া

ম্যাক্রোগ্লসিয়ার চিকিৎসা করা হয় কিভাবে?

ম্যাক্রোগ্লসিয়া সম্পূর্ণভাবে চিকিৎসাযোগ্য, তবে এর চিকিৎসার ধরন নির্ভর করে রোগটির মূল কারণ ও আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স ও শারীরিক অবস্থার ওপর। বিশেষ করে শিশুর ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

১. হরমোনজনিত সমস্যা হলে দেওয়া হয় হরমোন থেরাপি

২. টিউমার বা অস্বাভাবিক টিস্যু বৃদ্ধি থাকলে প্রয়োজন হতে পারে অস্ত্রোপচার (অপারেশন)

৩. জন্মগত জটিলতা থাকলে লাগতে পারে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও থেরাপি

৪. স্পিচ থেরাপি (কথা শেখার থেরাপি) ও ফিডিং থেরাপি (খাওয়ার সমস্যা সংশোধনের থেরাপি) দরকার হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের হ্মেত্রে

তাহলে আমাদের করণীয় কী?

এই ধরনের অবস্থা নিয়ে বেঁচে থাকা একজন মানুষের সবচেয়ে বড় চাওয়া সহানুভূতি ও মানবিকতা।

• ভুল ধারণা ও কুসংস্কার দূর করা
• পরিবারকে মানসিক সাপোর্ট দেওয়া
• চিকিৎসা ও তথ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি
• সহনশীলতা ও সমবেদনা বাড়ানো

উপসংহার:

ম্যাক্রোগ্লসিয়া কোনো খারাপ বা অলৌকিক বিষয় নয় এটি একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যার সমাধান আছে।
তাই আপনার একটু সচেতনতাই হতে পারে এই রোগ থেকে মুক্তির কারন।
আপনাদের সুস্থতাই আমাদের কাম্য, ধন্যবাদ।